আজ আপনাদের একটি ছোট শিশুর গল্প বলবো। ছোটোবেলায় তার ভালো লাগতো রঙতুলি নিয়ে খেলতে, ছবি আঁকতে। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সারাক্ষণ তার নেশা ছিলো এই রঙতুলির দুনিয়া। অন্য কোনকিছুতেই মন বসতো না তার। পরিবার থেকেও কড়া কথা শুনতে হতো। তেমন কোন সাপোর্টও পেতো না সে পরিবার থেকে। সেই ছোট শিশুটি, যার মন পড়ে থাকতো রঙতুলিতে, সেই শিশুটি আর শিশু নেই। বড় হয়ে সেই শিশুটি হয়েছেন একজন ফ্যাশন ডিজাইনার। ফ্যাশন ডিজাইনিং ছাড়াও সৃষ্টিশীল আরও অনেক কাজে জড়িয়ে আছেন তিনি। তিনি আর কেউ নন, বাংলাদেশের বিখ্যাত ফ্যাশন হাউজ  রঙ-এর প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লব সাহা।  

বিপ্লব

 

মাত্র ১০০ স্কয়ার ফিট এর এক জায়গা নিয়ে ১৯৯৪ সালের ২০ ডিসেম্বর শুরু হয় রঙ এর পথচলা। বিপ্লব সাহার তত্ত্বাবধায়নে এরপর তারা একে একে পার করেছে ২৫ টিরও বেশি বছর। এরমাঝে খুব সাম্প্রতিক সময়ে রঙ নাম বদলে হয়েছে ‘বিশ্বরঙ’। বিশ শতক অতিক্রম করে একুল শতকের এই সময়ে এসে ‘রঙ’ সময় রাঙানোর ভাবনাটা ছড়াতে চায় বিশ্বময়। বিশ্বময় ছড়ানোর এই ভাবনা নিয়ে ২০১৫ সালে পথচলা শুরু করে “বিশ্বরঙ”।  

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় এখন বিশ্বরঙের অসংখ্য শাখা, আউটলেট। সত্যিই এক গর্ব করার মতো ব্যাপার।  

 

কিন্তু শুরুতে এই চলার পথটা কিন্তু মসৃণ ছিলো না। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে চারুকলায় ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেন বিপ্লব সাহা। টিকেও যান সহজেই। কিন্তু পরিবারে বাবা’র আপত্তি ছিলো। তিনি চাইতেন না ছেলে এই বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করবে। বাবার কথা রেখেই একসাথে বিকম আর চারুকলা দুইটাই পড়তে থাকেন। কিন্তু শেষমেষ বিকম পড়াটা হয়নি। আর চারুকলাতেই পূর্ণ মনোনিবেশ দেওয়া শুরু। চারুকলাতে থাকতে থাকতে ছোট পরিসরে শুরু করে দেন রঙের কাজ। স্ট্রাগলটাও শুরু তখন থেকে। 

বিপ্লব

 

এখন যে ব্যাপারটা খুবই স্বাভাবিক, সেই নব্বই দশকে তা স্বাভাবিক ছিলো না। অবাক হলেও সত্য, সে সময় জয়নুল গ্যালারিতে বিপ্লব সাহা তার ডিজাইনিং শাড়ির প্রদর্শনী করেন। বিপ্লব তার শাড়ির ঝোলাটা রাখতেন আশেপাশের কোন এক দোকানে। চারুকলার ক্লাস শেষে সেই ঝোলা নিয়ে চলে যেতেন প্রদর্শনীর স্থানে। এক কাঁধে রঙতুলির ঝোলা আর অন্য কাঁধে কাপড়ের ঝোলা। এ নিয়ে হাসি ঠাট্টারও পাত্র হন তিনি। কিন্তু তিনি মুষড়ে পড়েননি। সে সময়ের অদম্য সেই যুবক তাঁর পরিশ্রম আর সৃষ্টিশীলতা দিয়ে কাজ করতে থাকেন।  

 

ধীরে ধীরে সবার ভালোবাসা পাওয়া শুরু। বিপ্লব সাহার নিজস্ব সৃষ্টিশীল চিন্তার সম্মিলন আর ব্যবসায়িক কমিটমেন্ট দিয়ে অর্জন করে নেন  নির্ভরতার জায়গা। তাই একসময় বেশ ভালোভাবেই দাড়িয়ে যায় রঙ। 

বিপ্লব

সফলতা পাওয়ার পর বিশ্বরঙ তাঁর এই দীর্ঘ পথচলায় কলেবর বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তারা চালু করে আরও দুটি নতুন সাব ব্র্যান্ড। দেশীয় ফ্যাশনকে বিশ্বময় হালফ্যাশনের সঙ্গি করতেই  শুরু হয় সাব ব্র্যান্ড ‘ফেইস রঙ’ এর পথচলা। এই সাব ব্র্যান্ডটি সমসাময়িক ফ্যাশনে তারুণ্যের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে এগিয়ে চলছে। মূলত পশ্চিমা ফ্যাশনের সাথে দেশীয় ফ্যাশনের মেলবন্ধনের লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছে ‘ফেইস রঙ’। এছাড়া প্রবীণদের কথা চিন্তা করে চালু হয় হয় ‘শ্রদ্ধা’। শ্রদ্ধাভাজন প্রিয়জনদের সুখি করবার বিনম্র ভাবনা থেকেই জন্ম ‘শ্রদ্ধা’র।

 

 

পরিশেষে, আবার সেই ছোটবেলায় ফিরে যেতে চাই। ছোটবেলার সেই শিশুটি রঙ নিয়ে খেলতো আর স্বপ্ন দেখতো। তার স্বপ্ন দেখায় যে ভুল ছিলো না তা আজ প্রমাণিত। রঙের ফেরিওয়ালা আজ  চলতে চলতে পেরিয়ে এসেছেন অনেকটা পথ। তার সেই অধ্যাবসায়, সৃজনশীলতা আর স্বপ্ন আজ রূপ নিয়েছে দেশের সেরা ফ্যাশন হাউজ বিশ্বরঙে।   

লিংকঃ https://bit.ly/2EeAKUv